গিরিয়া হাঁস ও কুড়া ইগলের গল্প
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে শীতকালে দেখা মেলে বিশ্বের অন্যতম বিপন্ন প্রজাতির কুড়া ইগল ও ছোট্ট হাঁস পাখি গিরিয়ার। চলতি বছরের ভাদ্র মাসের শেষভাগে জানা যায়, দুটি কুড়া ইগলের বাসার জায়গা কাটা হবে। এসব বাসা গড়ে তুলেছিল তারা ছাতিম ও জামগাছের ওপর, মহেশখোলা এলাকার একটি কবরস্থানের পাশে। স্থানীয় নৌকাচালক শামীম ও সহকর্মী ইয়াহিয়া গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে সচেতনতা তৈরি করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর গ্রামবাসীরা গাছ না কাটার সিদ্ধান্ত নেন এবং নূর মিয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর ফলে দুই জোড়া কুড়া ইগলের বাসা রক্ষা পেল।
কুড়া ইগল শীতকালে হাওরে আসে মূলত বাসা বানানোর জন্য। গরমে এরা চলে যায় তিব্বত ও মঙ্গোলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। হাওরে বড় গাছ ও বাসার জায়গা না থাকলে এই প্রজাতি ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। কুড়া ইগল মাছ ও জলজ পাখি খেয়ে বাঁচে, যা হাওরে সহজলভ্য।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ঘটনা স্মরণযোগ্য। টাঙ্গুয়ার হাওরে জলচর পাখি গণনা চলাকালে দেখা যায়, একটি কুড়া ইগল ভূপৃষ্ঠের ছোট গিরিয়া হাঁসকে শিকার করে। হাঁসটিতে বৈজ্ঞানিকভাবে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসানো হয়েছিল, যা হাঁসের গতিপথ পর্যবেক্ষণের জন্য। দুই দিনের মধ্যে হাঁসটি খাওয়া হয়। পরবর্তীতে শিকারটি একটি মোবাইল টাওয়ারের ওপর কুড়া ইগলের বাসায় ধরা পড়ে।
গিরিয়া হাঁসও শীতকালে তিব্বত ও মঙ্গোলিয়া থেকে আসে। হাওরের প্রজনন এলাকা দিয়ে তারা শীতকালে অভ্যন্তরীণ জলাভূমিতে আসে, যেখানে ইগলগুলো তাদের খাবারের জন্য শিকার করে। হাওরের রামসিংপুর এলাকায় কুড়া ইগলরা বাসা বানায়। যখন মানুষ গাছ কেটে তাদের বাসা ধ্বংস করে, তখন তারা অসহায় হয়ে পড়ে। সঠিক সংরক্ষণ না হলে এ ধরনের পাখিদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।
এই গল্পই দেখায় কুড়া ইগল ও গিরিয়া হাঁসের জীবন সংগ্রামে মানুষের সচেতনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। গাছ ও বাসার সংরক্ষণ করলে হাওরের এই দুই প্রজাতি টিকে থাকতে পারবে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে।














